ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হেমন্তের শুরুতে পশ্চিম ও উত্তরের জেলাগুলোতে শুরু হয়েছে শীতের চিরচেনা রূপ

আমাদের খবর ২৪

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম

হেমন্তের শুরুতে পশ্চিম ও উত্তরের জেলাগুলোতে শুরু হয়েছে শীতের চিরচেনা রূপ

দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়া ও পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে শরতকে বিদায় এবং শীতকে স্বাগত জানিয়ে হেমন্ত এসেছে তার চিরচেনা রূপে। তাইতো শীতের আগমনে চিরচেনা প্রকৃতি তার রূপ পাল্টিয়ে ফিরেছে আপন রূপে। রাতভর হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা সকাল পর্যন্ত চাদরের মত বিছিয়ে থাকছে দিগন্তজুড়ে।

কমতে শুরু করেছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। প্রতিদিনই নামছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। মঙ্গলবার ও বুধবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেইসঙ্গে নামছে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে আসতে থাকায় এখন দিনে আর প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে না। বিকেল থেকেই পশ্চিম ও উত্তরের হালকা হিমেল বাতাসে শুরু হয় শীতের পরশ। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হচ্ছে হালকা কুয়াশা। রাত বাড়ার সাথে সাথে হালকা কুয়াশা রূপ নিচ্ছে মাঝারি কুয়াশায়। সকালে গাছের পাতায় শিশির বিন্দু জমে থাকছে অনেক বেলা অবধি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, মৌসুমি বায়ু ধীরে ধীরে বিদায় নিতে শুরু করায় আকাশ পরিস্কার হচ্ছে। সেই সঙ্গে উত্তরের বাতাস শুরু হওয়ায় শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। সামনের দিনগুলোতে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে আরও কমতে শুরু করবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরের জেলাগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। বৃষ্টির মেঘ কেটে গেলে পুরো শীত নামবে।

আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে শিশু এবং বয়স্ক মানুষরা হালকা সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে চারশ রোগী হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনোয়ারুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া পরিবর্তন হবার কারনে বিশেষ করে শিশুরা সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে, বাসি খাবার পরিহার করে শিশুদের নানাভাবে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এখন দিনের বেলা তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকার কারণে এসি-ফ্যান চালালেও সন্ধ্যার পর থেকেই এগুলোর সুইচ অফ রাখতে হচ্ছে। শুরু হয়েছে শীতের পুরো প্রস্তুতি। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে শীতের সম্বল লেপ তোষক তৈরি শুরু করে দিয়েছেন উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা।

জেলা শহরের লেপ তোষক তৈরির আস্থানা হিসেবে পরিচিত কদমতলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লেপ তৈরির কারিগররা। প্রতিটি দোকান প্রতিদিন ২৫-৩০টি করে লেপ সেলাই করছেন।

জেলা শহরের কদমতলা রোডের তুলা ব্যবসায়ী নাসির বেহারী জানান, তুলা ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার আগের বছরের তুলনায় লেপের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন আগেভাগেই লেপ সেলাই করছেন। কেউবা আবার পুরোনো লেপ নতুন করে সেলাই করে নিচ্ছেন। তবে শীতের প্রস্তুতি নেই খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষদের। হাতে কাজ কম ও দ্রব্যমূল্যে উর্দ্ধগতির কারণে সংসার সামলানোটাই তাদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শীত নিয়ে শংকায় রয়েছেন তারা। লেপ তৈরি করার মতো তাদের কোনো সামর্থ্য নেই।

প্রচণ্ড শীতে কাহিল মানুষদের জন্য প্রতিবছর সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিরতণ করা হয়। কিন্তু এগুলোর পরিমাণ খুবই নগন্য এবং নিম্নমানের বলে অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও শহরের আশপাশেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন এই সকল শীতবস্ত্রের দেখাই পায়না।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে অন্য জেলার তুলনায় আগেই শীত শুরু হয়। ইতোমধ্যে শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। শীত নিয়ে দুঃস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা শীতের কম্বলসহ পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রেখেছি।

Link copied!