বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে ২২টি স্টল নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছিলেন জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক বর্তমানে কারান্তরীণ বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তাদের পরিবারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি এতিমখানার নামে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় স্টলগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সেগুলো অপসারণ করে সওজ। এখন সেখানে দখল করে স্টল নির্মাণ করছেন কয়েকজন ছাত্র। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নগরীর রূপাতলী এলাকায় ওই স্থানটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের উত্তর পাশে অনেক জমি সওজের। এর পেছনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ভবন। আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাবশালী সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ঝালকাঠির শেখেরহাটে তাঁর গ্রামের বাড়ির মাদ্রাসার নামে ওই জমি ইজারা নিয়েছিলেন। ২২টি স্টল করে প্রকারভেদে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। গত ২২ নভেম্বর সওজ ওই ২২টি স্টলসহ টার্মিনাল রূপাতলী এলাকায় ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে।
গতকাল মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদের খালি জায়গায় অস্থায়ী স্থাপনা করে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসে গেছে। তার মধ্যে একটিতে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী কল্যাণ সংস্থার বরিশাল শাখার অস্থায়ী কার্যালয়। উচ্ছেদ স্টলের যেটিতে ভোজনবিলাস নামের রেস্তোরাঁ ছিল, সেখানে এখন কাঠের স্থাপনার নির্মাণকাজ চলছে। তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের তদারকি করছেন দু’জন ছাত্র। স্থানীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা ঘর তুলছেন। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নামে দোকান হবে বলে তারা শুনেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদের লোক। বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তিনি। থাকেন শেরেবাংলা হলে। শাহেদের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে।
তবে সওজের জমিতে ঘর তোলার সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করে শাহেদ জানান, তিনিও সেখানে ঘর তোলার কথা শুনেছেন। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এটি দখল নয়, আবার ইজারাও নেওয়া হয়নি বলে জানান এ ছাত্রনেতা। আরেকজন গণমাধ্যম কর্মীকে বলেছেন, ‘আমি শুনেছি, আমাদের আহত ছাত্ররা সেখানে বসবে। প্রশাসন যখন আসবে, তাদের প্রয়োজনে সরিয়ে নেওয়া হবে।’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের উচ্ছেদ হওয়া জমিতে নতুন করে ঘর তোলা হচ্ছে জানানো হলে সওজের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সেখানে ঘর তোলা হলে উচ্ছেদ করব।’ ছাত্ররা ঘর তুলছেন এবং কাজ বন্ধ করবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে আসার পর তারা আবার কাজ শুরু করবে। এখানে শক্তি প্রয়োগের বিষয় আছে।’
আপনার মতামত লিখুন :