প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
নিহতর পরিবারের আহাজারি
বাড়ি দখল নিতে কুষ্টিয়া থান পাড়া রেনউইক চর এলাকার এক দিনমজুর ছুরমানকে দুই দিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও দুই যুবক আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের চর থানাপাড়া এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহত ছুরমান (৩৫) কুষ্টিয়া থানা পাড়া রেনউইক চর এলাকার মৃত কালাম হোসেনর ছেলে।
ছুরমান ট্রাকের হেলপার এবং বিভিন্ন সময় রিকশা চালাতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছুরমান আলীর সঙ্গে প্রতিবেশী আবদুল হাকিমের বিরোধ চলছিল। ওই প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরির ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ১০-১২ জন ছুরমানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে ভোরে প্রতিবেশী উজ্জ্বলের বাড়ির শৌচাগারের পাশে গলায় গামছা প্যাঁচানো নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।
ছুরমানের ছোট ভাই সেলিম জানান, গত মঙ্গলবার আমার বাড়ির পাশ্ববর্তী হাকিম কয়েকজনকে নিয়ে এসে বলেন, তোমার ভাই আমার বাড়িতে চুরি করেছে। এরপর তাঁরা আমার ভাই আশরাফুলকে তুলে নিয়ে নিউ জননী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় নিয়ে মারধর করে শিকার করান যে আমার ভাই চুরি করেছে। সে ওদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওদের সাজানো কথা বলে। ওরা আমার ভাইয়ের স্বীকারোক্তি ভিডিও রেকর্ড করে রাখে। এরপর তাঁরা আমার ভাইকে হাকিমের বাড়িতে দুইদিন ধরে আটকে রাখে। হাকিমের বাড়িতে পুলিশ গেলে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আশরাফুলের শরীরে নির্মমভাবে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।
এছাড়াও আরেক ভুক্তভোগী কারিবুল জানান, আমাকে মঙ্গলবার কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যায় নিউ জননী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে নিয়ে আমাকে ইমরুল কায়েস সহ কয়েকজন মিলে চোখ বেঁধে মারধর করে। আমি অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর দেখি আশরাফুলদের নিয়ে এসেছে। তারা যখন বলে আমি চুরির সাথে জড়িত না। তখন তাঁরা আমাকে ছেড়ে দেয়। নিউ জননী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চতুর্থ তলায় এদের টর্চার সেল। সেখানে দেশিও অস্ত্র ও অনেকগুলো লাঠি ছিল। আমাকে মারতে মারতে কয়েকটা কাঠের বাটাম ভেঙে ফেলছে। এই ক্লিনিকের মালিক ইমরুল কায়েস হাকিমের মেয়ে জামাই।
হাকিম কুষ্টিয়া থানা পাড়া রেনউইক চর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।
ছুরমানের এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গতকাল হাকিম তার লোকজন নিয়ে এসে ছুরমানের বাড়ি থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এর পূর্বে তাঁরা ছুরমানের বাড়ি জোর করে স্টাম্পে লিখে নেয়।বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ এসে তাদের বাড়ির তালা খুলে দিয়েছে। এলাকায় এখন শোকের মাতম।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হোসেন ইমাম বলেন, ছুরমানের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে মোটা রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে নিউ জননী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লাঠি রয়েছে। তবে ইমরুল কায়েসকে পাওয়া যায়নি। ইমরুল কায়েসের মোবাইল বন্ধ রয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠি জব্দ করে নিয়ে যায়।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ছুরমানকে চুরির অভিযোগে নির্যাতন করে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ এরই মধ্যে জড়িতদের আটকের চেষ্টা করছে।’
আপনার মতামত লিখুন :