ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১
amaderkhobor24.com
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

দুই দফায় আংশিক চালু

আমাদের খবর ২৪

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম

দুই দফায় আংশিক চালু

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অন্তঃবিভাগের আংশিক অংশ উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার (৭ এপ্রিল)  সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উল্লেখযোগ্য আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য ও প্রশাসন) ডা. রিজওয়ানুর রহমান দ্বিতীয় দফায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির অন্তঃবিভাগের এ আংশিক অংশ উদ্বোধন করেন। 

এর আগে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর হাসপাতালটির বর্হিবিভাগের আংশিক অংশ চালু করা হয়। এভাবে দফায়-দফায় আংশিক-আংশিক করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির পূর্নাঙ্গ কার্যক্রম চালু করতে আরও কতো বছর লাগবে তা নিয়ে হতাশ কুষ্টিয়াবাসী! 

কর্তৃপক্ষের এধরনের আংশিক কার্যক্রমকে হাসপাতাল চালুর নামে মসকারা ও লোক দেখানো বলে মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। এছাড়াও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি পূর্নাঙ্গভাবে চালুর দাবিতে যেসকল সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা সরব ছিলো তাঁদের কৌশলে থামাতেই কর্তৃপক্ষ ঢাকঢোল পিটিয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজটির একাধিক  শিক্ষার্থী। তাছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সুদীর্ঘ আলোচনায় থাকা এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে এখনও লুটতরাজ ও অনিয়ম-দুর্নীতি  চলছেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল কবীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সীমিত পরিসরে হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো। এছাড়াও এই মুহুর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু না হওয়ায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ডকৃত রোগী ভর্তি করা হবে।  দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত রোগী ভর্তি কার্যক্রম চলমান থাকবে। মেডিসিন ও শিশু বিভাগের প্রতিটিতে ৪৫ জন করে সর্বমোট  ৯০ জন রোগী বিছানা খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি করা হবে। অনতিবিলম্বে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় আংশিকভাবে প্যাথলজি বিভাগ চালু করা হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। ঠিকাদার নিযুক্ত হওয়া সাপেক্ষে রোগীর পথ্য সরবরাহ করা যাবে। বিভিন্ন বিভাগের জনবল ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলমান রয়েছে। এছাড়াও ওই বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের হাসপাতালে আগমন নিরুৎসাহিত করা সহ সীমাবদ্ধতা সমূহ দ্রুততম সময়ে নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের সাথে যোগাযোগ করছে এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সচেষ্ট আছেন বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তবে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিকাল ক্লাসে যে ধরনের রোগী প্রয়োজন হবে সেই ধরনের রোগী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করে আনা হবে। এটি হাসপাতালের পূর্নাঙ্গ কার্যক্রম চালুর দাবিতে সরব থাকা শিক্ষার্থীদের কৌশলে থামানোর চেষ্টা বলেও জানান অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগের অনুগত ও দুর্নীতিগ্রস্থ ঠিকাদারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি সমূহের মান কোনপ্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই গ্রহণের জন্য তড়িঘড়ি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ লোক দেখানো  আংশিক উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পৌনে তিন শত কোটি টাকার  প্রাক্কলন ব্যয় বেড়ে হয় সাত শত কোটি টাকা। তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পের নির্মাণকাজ হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি।

জানা যায়, হাসপাতালটিতে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি  ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ ও ৮৮টি কেবিন থাকছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে। কলেজ ও হাসপাতাল মিলে থাকছে ২১টি বড় লিফট। ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিইউ, অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলোজি, গাইনী, চক্ষু ও নাক-কান-গলাসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে মেশিনসহ বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ( চাহিদার ৬০ ভাগ) কোটি কোটি টাকার যন্ত্র-মেডিকেল সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

২০২৩ সালের বেডশিট প্রথম রোগী: উদ্বোধনের দিনেই কুষমেক হাসপাতালের বেডে ২০২৩ সালের ২২ জুন মেয়াদ সম্বলিত বেডশিট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। যদিও মার্কিং কাপড়ের তৈরি এই বেডশিটগুলো সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকে। সরজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ বেডশিট ড্যামেজ হয়ে গেছে। 

ভর্তি রোগীরা ঔষধ ও খাবার পাচ্ছে না: 

হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা ঔষধ ও খাবার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। রবিবার থেকে এই হাসপাতালে  রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত কোন প্রকার ঔষধ ও নাস্তা বা খাবার  দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন রোগীরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হবে।

উদ্বোধনকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দার, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি‍‍`র সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া কোর্টের স্পেশাল পিপি এ্যাডভোকেট শামিম উল হাসান অপু,জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, চিকিৎসক ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘স্বল্প পরিসরে মেডিসিন ও শিশু বিভাগে ৪৫টি করে মোট ৯০ শয্যায় আবাসিক কার্যক্রম শুরু হলো। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গরূপে হাসপাতালটি চালু করতে পারবো।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রিজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘একটা বড় কাজ শুরু হলো এখন থেকে। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি অন্তত শুরু হলো। এখন ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গরূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে। রোগীদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে।’

Link copied!