প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৩, ০৬:৪৮ পিএম
বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যানসের কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রোববার (১২ নভেম্বর) আলাদা তিনটি খামে তাদেরকে নোটিশটি পাঠান খন্দকার হাসান শাহরিয়ার নামে এক আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, আপনি/আপনারা যথাক্রমে ১নং নোটিশ প্রাপক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, ২নং নোটিশ প্রাপক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ৩নং নোটিশ প্রাপক বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের (পুরুষ) এর অধিনায়ক।
ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু আইসিসি পুরুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ ছিল বাংলাদেশের জন্য ব্যর্থ মিশন। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে তৃতীয় স্থানে থেকে বিশ্বকাপে পা রাখে বাংলাদেশ। শুরুর আগেও শুরু থাকে। সেই মতো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের শুরু অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে। অবশ্য বাদ দেওয়া হয়েছিল, না তিনিই সরে গিয়েছিলেন সেই বিতর্ক পাশে সরিয়ে রেখেও এ কথা বলতে হবে মহাবিতর্কে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তখন দলের প্রত্যাশা ছিল একটাই সেমিফাইনাল খেলা। এরপর প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল শুভসূচনা করে। ধর্মশালায় সেই ম্যাচ শেষ হওয়ার পরও কেউ ধারণা করাতে পারেনি এমন বাজেভাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হবে। যা সমগ্র বাংলাদেশের জনগণকে ব্যথিত করেছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, মাঠের খেলার বাইরে এবারের বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্টের মাঝে দলকে ফেলে দেশে এসেছিলেন অনুশীলন করতে। এর আগেও তিনি বিভিন্ন সময়ে খেলা চলাকালীন বিজ্ঞাপনের শুটিং করে সমালোচিত হয়েছিলেন। যা কাম্য নয়। সাকিবের মতো একজন উঁচু মাপের খেলোয়াড়ের কাছে সমগ্র জাতি আরও পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।
নোটিশে বলা হয়, বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে এমন কোনো ক্রিকেট বোর্ড সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ দল গড়েছিল তাদেরই দেশসেরা ওপেনারকে দলের বাইরে রেখে। যেই ওপেনারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেকে নিয়ে অবসর থেকে খেলায় ফিরিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ শুরুর দুই মাস আগে নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল দলের দায়িত্ব ছাড়েন। আবার ওপেনার লিটন দাসও ব্যক্তিগত কারণে (পুত্র সন্তানের জন্ম) দুবার খেলা চলাকালীন দেশে এসেছেন। পেশাদার দলে মানবিক কারণে একবার আসা মেনে নেয়া যায়। তাই বলে একাধিকবার। ম্যাচ গুরত্বহীন হলেও পেশাদার টিমে এমনটা চলতে পারে না। ম্যানেজমেন্টের এমন নিচ্ছিল মানসিকতা চূড়ান্ত পেশাদার সময়ে আরও বেমানান। অথচ বোর্ড কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার জন্য যে মান ও দক্ষতার প্রয়োজন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটার সেই জায়গাটায় পিছিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো এখনো পড়ে আছে প্রাচীন যুগে। স্কুলভিত্তিক, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট ও প্রশিক্ষণ ঠিকমতো না হওয়ায় নতুন মেধাবী ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে না। আধুনিক কৌশল এবং প্রযুক্তির চর্চা নেই। ক্রিকেট দলীয় খেলা হলেও দল গড়তে, একাদশ সাজাতে বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার চড়া মূল্যই দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট চলে এখনো পুরনো পন্থায়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কোচিং স্টাফ ও নির্বাচক কমিটি বাতিল করবেন। একইসঙ্গে আইসিসি পুরুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ এ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নিজস্ব কোচ তৈরি, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলো যে ধরনের উইকেটে হয় তার অন্তত কাছাকাছি মানের উইকেটে ঘরোয়া লিগে আয়োজন, স্কুল ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও প্রশিক্ষণের আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে চলমান বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে সমগ্র জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। অন্যথায় প্রচলিত আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :