ঢাকা সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
amaderkhobor24.com

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা

আমাদের খবর ২৪

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা

চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

শনিবার বেলা ৩টায় জেলায় তাপমাত্রার পারদ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ।

তিনি বলেন, “এটি এই মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপ প্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি ও এর ওপরের তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন বলেন, বুধবার থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

বুধবার থেকে শনিবার এই চার দিনে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে অতি তীব্র অবস্থায় পৌঁছেছে।

চার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার হিসেব দিয়ে তিনি বলেন, বুধবার ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, শুক্রবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং শনিবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

গেল বছরের ২৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

তার আগে ১৯৯৫ ও ২০০২ সালেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়, যা দেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ।

আর ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ওঠে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল বগুড়ায়।

আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল ঢাকায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল তাপমাত্রা। আর ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তার আগে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ১৯৬০ সালে ঢাকায় পারদ উঠেছিল রেকর্ড ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এবার দেশের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছানোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ চড়তে থাকে। শনিবার বেলা ৩টায় যা ৪২ ডিগ্রিতে গিয়ে ঠেকে।

জেলায় গেল তিন দিনের মত শনিবার সকাল থেকেই প্রখর ছিল রোদ, গরম ছিল তীব্র। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপ অসহনীয় মাত্রায় চলে যায়। এতে সব বয়সি ও শ্রেণি-পেশার মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। শ্রমজীবী মানুষদের কষ্ট চরম আকার ধারণ করে। অনেককেই কাজ ফেলে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম ফেরিঘাট সড়কের একটি ভবনের পাশে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, “তীব্র রোদে খোলা ভ্যানে যাত্রীরা উঠছেন না। তাই রোজগারও করা যাচ্ছে না।”

চুয়াডাঙ্গার মাঠে মাঠে এখন চলছে ধান কাটা ও ভুট্টা তোলার কাজ। তীব্র রোদ-গরমে হাঁসফাঁস করছেন এসব কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। 

সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের রতন আলী বলেন, “মাঠে অনেক কাজ। কিছুই করতে পারছি না। খুব সকালে এসে কোনো রকমে কিছুটা কাজ আমরা করছি।”

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান খোকন বলেন, “তীব্র গরমের এই সময়ে সকলকেই বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রোদে না যাওয়াই ভালো। সকালের রান্না দুপুরে আর দুপুরের রান্না করা খাবার বিকালে খাওয়া যাবে না। রাস্তাঘাটে খোলা স্থানে বিক্রি হওয়ায় শরবত না খাওয়াই ভালো।”

এরপরও শরীরে কোনো ধরনের সমস্য দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে, রোববার থেকে কিছু জায়গায় গরম কমে আসবে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, “পরশুদিন থেকে তাপমাত্রা আরো কমবে।”

Link copied!